স্টারলিঙ্ক হলো স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের জন্য স্পেস এক্স এর নির্মাণাধীন একটি কৃত্রিম স্যাটেলাইট ইন্টারনেট তারকামন্ডল। এই তারকামন্ডলে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (LEO) হাজার হাজার ছোট কৃত্রিম উপগ্রহ থাকবে,যা ভূমির ট্রান্সসিভারের সাথে একত্রে কাজ করবে। স্পেসএক্স সামরিক, বৈজ্ঞানিক বা গবেষণামূলক কাজের উদ্দেশ্যে কিছু উপগ্রহ বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। ওয়াশিংটনের রেডমন্ডের স্পেসএক্স স্যাটেলাইট ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি স্টারলিংক গবেষণা, উন্নয়ন,উৎপাদন এবং কক্ষপথ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৮ সালের মে মাসে দশক দীর্ঘ এই তারকামণ্ডল প্রকল্পটির নকশা,নির্মাণ এবং স্থাপনের জন্য ব্যয় হিসাবে স্পেসএক্স প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করেছিল।
স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট হল স্পেসএক্সের মালিকানাধীন অনেকগুলো স্যাটেলাইটের একটি সিরিজ যা বিশ্বের যে কোনও জায়গায় কম খরচে,উচ্চ-গতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যা একসারিতে থাকে এবং দেখতে ট্রেনের মতো লাগে। স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর একটি নিম্ন কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান রয়েছে,যার অর্থ স্যাটেলাইটগুলো ভূমি থেকে দৃশ্যমান এবং মাথার উপর দিয়ে যেতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের আকাশে এলন মাস্কের ‘স্টারলিংক প্রজেক্ট’-এর ‘স্যাটেলাইট ট্রেন’ দেখা গিয়েছে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় গত (১৪ মে) ভোরে ৬১টি স্যাটেলাইটের বিশাল বহর ভোর ৪টা ৪ মিনিট থেকে ৪টা ১৪মিনিট পর্যন্ত ১টি স্যাটেলেইটের ট্রেন দেখা গিয়েছিলো।
এদিন সন্ধ্যার স্যাটেলাইটগুলো উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে বিলীন হয়ে এবং ভোরের সারিটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে উত্তর-পূর্ব দিকে বিলীন হতে দেখা গেছে! স্টারিলিংক প্রজেক্টের স্যাটেলাইট ট্রাকিং ওয়েবসাইট ফাইন্ড স্টারলিংক ডট কম থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে,স্টারলিংক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তিবিদন এলন মাস্কের স্যাটেলাইট নির্ভর ইন্টার ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রজেক্ট। তার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্পেসএক্স থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।
গোটা দুনিয়া এখন চলছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ওপর ভর করে। এই প্রযুক্তিকে আমূল বদলে ফেলে নতুনত্ব আনতে যাচ্ছেন এলন মাস্ক। তিনি পুরো পৃথিবীকে তার স্যাটেলাইট দিয়ে ঘিরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইটের এক জাল তৈরি করছেন তিনি। উদ্দেশ্য,স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবী সব অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া।
এজন্য এলন মাস্ক ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে তার এই বিশাল আয়োজন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার এই প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টারলিংক প্রজেক্ট’। ৪২ হাজার থেকে তিনি ইতিমধ্যে ১৪৪৩টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত ২৯ এপ্রিল একসঙ্গে ৬০টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন। এলন মাস্কের একত্রে এত স্যাটেলাইট পাঠানোকে বলা হচ্ছে ‘স্যাটেলাইট ট্রেন’। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান নাসা। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। আর বিশ্বে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বেসরকারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপক প্রতিষ্ঠান এলন মাস্কের স্পেসএক্স।
স্টারলিংক স্যাটেলাইটের লক্ষ্য হল বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট অ্যাক্সেস আনা যেখানে ঐতিহ্যগত ইন্টারনেট অবকাঠামো সম্ভব নয়। NASA Spaceflight অনুযায়ী,বেসরকারি মহাকাশযান কোম্পানি SpaceX এর তৈরি করা মেগাকনস্টেলেশন কক্ষপথে প্রায় ৪২,০০০টি উপগ্রহ হতে পারে। এই বিপুল সংখ্যক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট জগতে বিপ্লব নিয়ে আসাই স্টারলিংক প্রযুক্তির উদ্যেশ্য।