শীঘ্রই পাঁচ মাসের বেতন পাচ্ছেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটেররা
সোমবার ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫১

সত্যজিৎ দাস ::
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও কিন্তু ধনী ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে একটি। পুরুষ ক্রিকেটে নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি ম্যাচ জয়ে এবং সিরিজ জয়ে আলাদা বোনাসও থাকে। অথচ গত ৬ মাসের মধ্যে ৫ মাস ধরেই বেতন পান না নারী ক্রিকেটাররা!
ক্রিকেট মাঠে সফলতা পেলেও দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না বাংলাদেশ নারী দলের ক্রিকেটাররা। গত জুন মাসে নিগার সুলতানা জ্যোতি, সালমা খাতুনদের ২০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। পাঁচ মাস কেটে গেলেও বাড়তি অংশ তো বটেই, আগের বেতনও পাচ্ছেন না নারী ক্রিকেটাররা। এ নিয়ে কয়েকজন ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপও জানিয়েছেন।
নারী ক্রিকেটারদের বেতন সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা, সর্বনিম্ন ৩০ হাজার। যা ছেলেদের তুলনায় নগণ্য। তারপরও জুনের পর থেকে বেতন বন্ধ এবং এর কারণটাও মেয়েদের জানানো হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে নারী বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন,'চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা তৈরি করে বোর্ডে জমা দিলেও অনুমোদন করা হয়নি এখনও। এ কারণেই জটিলতা দেখা দিয়েছে।'
এদিকে বেতন বন্ধ থাকলেও মাঠে ঠিকই পারফর্ম করছেন নারী ক্রিকেটাররা। গত জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ড্র করার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জেতেন জ্যোতিরা। সবমিলিয়ে শেষ ৮টি ওয়ানডের ৪টিতেই জয় তুলে নিয়েছেন টাইগ্রেসরা।
জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের ২০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু সেই ঘোষণার পর পাঁচ মাস কেটে গেলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি আগের বেতনও পাচ্ছেন না জ্যোতি-সালমারা।
নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে বেতন ইস্যুতে আক্ষেপ বিরাজ করলেও কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কয়েকজনের সঙ্গে বিভিন্ন সুত্রে কথা বলে জানা গেছে,বেতন বন্ধের কারণও জানানো হয়নি বিসিবির তরফ থেকে।
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা এখন নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছেন। সদ্যই পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। আবার কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে বাইরে আলোচনার করছেন,এমন অভিযোগ নিয়েও সতর্ক অবস্থানে বিসিবি।
কেন নারী ক্রিকেটারদের বেতন বন্ধ রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদমাধ্যমকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন বলেন,'অন্য কোনো ইস্যু এখানে নেই। (কেন্দ্রীয় চুক্তির) তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ বাকি ছিল,তাই দেরি হচ্ছে। আমরা খুব শিগগিরই হয়তো দিয়ে দেবো।'
বছরের শেষ পর্যায়ে এসে তালিকা তৈরির কাজ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের সব ঠিক আছে। তালিকার কাজ প্রক্রিয়াধীন। চূড়ান্ত হয়ে গেলে দিয়ে দেবো। ' তবে বিসিবির নারী বিভাগের এক কর্মকর্তা দায় স্বীকার করে বলেন, 'এটা (বেতন না দেওয়ার বিষয়টি) আমাদের খোঁজ রাখা উচিত ছিল। আমাদের দায় আছে। দুই-একদিনের মধ্যেই হয়তো সুরাহা হয়ে যাবে।'
বিসিবি ক্রিকেটারদের জন্য এক বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি করে। বর্তমান চুক্তিতে আছেন ২৫ জন ক্রিকেটার। তাদের ২০ শতাংশ বেতন বাড়ানোর কথা ছিল আরও আগেই। এমনকি কয়েকজন ক্রিকেটারের বেতন রাউন্ড ফিগার করতে কিছু অর্থ যোগ করার কথাও ছিল।
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরি নাদেল গণমাধ্যমকে জানান, কাল অথবা পরশুর মধ্যেই মেয়েরা বকেয়া বেতন পেয়ে যাবে।
এসময় তিনি জানান,'এটা সত্য আসলে। তবে আমি বিষয়টি জানতাম না,বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। ৫ মাস আগে নতুনভাবে বেতনের তালিকা দিয়েছিলাম, এরপর বোর্ডে এপ্রুভ করার পরে হবে বেতন। আমরা তো দিয়ে দিয়েছি সব। আমাকে কেউ আসলে আর ইনফর্ম করেনি পরে।'
নাদেলের সঙ্গে বিসিবি সভাপতির নির্দেশ দ্রুত এর সমাধান করার, 'এটা বোর্ড থেকেই পরে একাউন্টসে পাঠানোর কথা। তবে মেয়েরা এটা নিয়ে কোনো কথা বলে নি, কোনো ইস্যু বানায়নি। তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। বোর্ডে আমার পক্ষ থেকে যা দেওয়ার সেটা আমি দিয়েছি। সিইওকে বলেছি দ্রুত এর সমস্যা সমাধান করতে। পাপন ভাইকেও বলেছি, ওনিও এটার সমাধানের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
এমএসি/আরএইচ