যুব বান্ধব বাজেট সময়ের দাবি

বৃহস্পতিবার ৯ জুন ২০২২ ২০:৪৬


বাজেট হতে হবে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সুনির্দিষ্ট বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামোনির্ভর। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ পাচার— এসব বিষয়ে সুষ্ঠু নজরদারি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার আনার বিকল্প নেই।পাশাপাশি যুব সমাজের সময়োপযোগী কর্মসংস্থানের বিষয়ে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে৷ 
 
এবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব প্রণোদনার ক্ষেত্রে দেশীয় উদীয়মান শিল্পকে অগ্রাধিকার দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। কর ছাড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করা হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে। প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকায় প্রাক্কলনে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, যা দেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে এটি ৭৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা এবং সেই হিসাবে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার এবং ঘাটতি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা।আসন্ন বাজেটে প্রাধান্য পাচ্ছে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়া হবে ভোক্তার হাতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য। বাড়বে ব্যক্তিকর আয়সীমা।
কর্মসংস্থানের এই তীব্র সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের যুব সমাজ আজ দিশেহারা। এ পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাপক যুব সমাজের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন যুব কর্মসংস্থান অনুযায়ী উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা। যা শুধু বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করবে না দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা ও অপরাধ নির্মূলেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই উদ্যোগ। কেননা, কর্মহীন যুবকদের বড় একটি অংশ অপরাধজগতে লিপ্ত হয় পেটের পায়ে কিংবা বিভিন্ন প্রলোভনে আজকাল যুক্ত হচ্ছে দেশদ্রোহী বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। যারা কিনা অস্থিতিশীল করতে চায় বাংলাদেশের রাজনীতি তথা সার্বিক পরিবেশকে। 
সে লক্ষ্যে এ বছর যুববান্ধব ও যুব কর্মসংস্থান উপযোগী বাজেট প্রণয়নে অধিক গুরুত্ব সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ ধারণার জনক গ্যারি বেকারের মতে— অর্থনীতি শুধু সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের সূত্রমালা নয়। বরং অর্থনীতি একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করা যায়। এ ধরনের বিশ্লেষণের জন্য জানতে হবে মানুষ কী চায়। (সূত্র: আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আকবর আলী খান)
যেহেতু শিক্ষিত যুব সমষ্টি ছাড়া কোন দেশের উন্নয়ন কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সেহেতু জাতীয়  বাজেটের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া সময়ের দাবি। বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সঠিক খাতে ব্যয় হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।যুবকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ যুবসমাজ তৈরির জন্য   বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে যাতে করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে ও  চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে আমাদের দেশের যুবকরাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে। যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য  তিন ধাপে কাজ করা যেতে পারে। প্রথমটি - হলো স্থানীয় পর্যায়ে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি। দ্বিতীয়টি - উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং তৃতীয়টি- বিদেশের বাজারে যুবদের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি। এই তিন ধাপের জন্য অবশ্যই এবারের বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে।এক্ষেত্রে যুবনীতি ও বাজেটে যুবসমাজের  মতামতের জন্য  ইয়ুথ কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের  অধীনেও ইয়ুথ কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে । মেধা পাচার বন্ধ ও মেধাবী যুব সমাজকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর জন্য আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 
আশার কথা হলো করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতিকে ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলে করোনাকালের দুরবস্থা পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশগুলোর তালিকায়ও রয়েছ বাংলাদেশের নাম। ফলে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আদিবাসী, প্রত্যন্ত অঞ্চল, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গসহ পিছিয়ে পড়া  যুবকদের কথা চিন্তা করে বাজেটে আলাদা আলাদা  বরাদ্দ রাখতে হবে। যুবসমাজ যাতে মাদক, নেশা, অসামাজিক কাজ,  বিদেশি অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তার ব্যবস্থা বাজেটে নিশ্চিত করতে হবে। 
বাংলাদেশের বর্তমানে  রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক  প্রেক্ষাপটে যুবকরাই প্রধান চালিকা শক্তি। তারা যদি দেশের সব কার্যক্রমে সম্মুখে থেকে  সকল উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয় তাহলেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করতে সক্ষম হবো। সুতরাং কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে যুববান্ধব ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সময়ের দাবি। যা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্ণিমানের অন্যতম একটি সময়োপযোগী ধাপ। 
এন আই আহমেদ সৈকত 
উপ- তথ্য,যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

এমএসি/আরএইচ